Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ভৌগোলিক পরিচিতি

প্রাচীনকালে ভূরুঙ্গামারী একটি নদীবহুল এলাকা ছিল। এখানকার সবগুলো নদীই খরস্রোতা ছিল। এ অঞ্চলে প্রবাহিত নদীগুলো বার বার তাদের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। নদীর পরিত্যক্ত গতিপথ থেকে বিল ও পুকুর সদৃশ খাল-বিল সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার প্রায় সবগুলো বিল এবং পুকুর মাছ চাষের উপযোগী। ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এ প্রবাদটি ভূরুঙ্গামারীর অধিবাসীদের কাছে এখনো সত্য। এক সময় ভূরুঙ্গামারী রুই মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল। ভূরুঙ্গা মাছের প্রাচুর্য থেকে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে ভূরুঙ্গামারী। লোকজন দল বেধে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় একে অপরকে আহ্বান করত ‘চল ভূরুঙ্গা মারতে যাই’। এভাবে ভূরুঙ্গামারী নামটি প্রচলিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্বে ভূরুঙ্গামারী কোচ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ভূরুঙ্গামারী -সোনাহাট রাস্তাটি মিলিটারী রোড নামে পরিচিত। কথিত আছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার সৈন্য চলাচলের জন্য রাস্তাটি তৈরি করেন। রাস্তাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসামের মনিপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।এই রাস্তাটি বাগভান্ডার বিডিআর (বিজিবি) ক্যাম্পের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

১৯১৫ সালের পূর্বে ভূরুঙ্গামারী নাগেশ্বরী থানার অধীনে ছিল। এ সময় ভূরুঙ্গামারী তে ফুলকুমার নামে একটি পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। ১৯১৫ সালে ভূরুঙ্গামারী পৃথক থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে ফুলকুমার নামক পুলিশ ফাঁড়িটি থানা সদরে স্থানান্তরিত হয়। ভূরুঙ্গামারীকে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে মান উন্নীত থানা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বঙ্গসোনাহাট বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব দক্ষিণ দিকে একটি পুরোনো তালগাছ এখনো অতীতের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আছে। এই তালগাছের পাশে ১৯৪০ সালে বাহারবন্দ পরগণার জমিদার শ্রীশ চন্দ্র নন্দীর নায়েব রমেশ চন্দ্রের উদ্যোগে সোনাহাটে একটি এম.ই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটি সোনাহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। দেশ বিভক্তির পর স্কুলটি মিলিটারী সড়কের দক্ষিণ দিকে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে এই স্কুলের পশ্চিম পাশে বসেছে সোনাহাট বাজার।সোনাহাট রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন স্থানে পাশাপাশি দু’টি সিনেমা হল ছিল। দু’টি হলের মধ্যে একটি ছিল শ্রীশ চন্দ্র নন্দীর এবং অন্যটি ছিল আসামের গৌরিপুরের জমিদারের। দুর্গাপুজা উপলক্ষে সোনাহাটে মেলা অনুষ্ঠিত হত। মেলায় সার্কাস এবং যাত্রাগানসহ বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকত। মেলা কতদিন স্থায়ী হবে এ নিয়ে দুই জমিদারের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত। বর্তমানে ভূরুঙ্গামারী শহর ১৯৬৬ সালে দেওয়ানের খামার নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পাকিস্তান আমলে এখানে একটি তাঁতি পাড়া ছিল। তাঁতির লুঙ্গি, গামছা এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করত। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন সার্কেল অফিসার গাজী আতিকুল হকের উদ্যোগে ভূরুঙ্গামারী ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করেছিলেন শামছুল হক চৌধুরী, ভূরুঙ্গামারী থানার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

ভৌগোলিক অবস্থানঃ
কুড়িগ্রাম বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। ২০.৩ থেকে ২৬.৩ ডিগ্রি অক্ষাংশ এবং ৮৯.২৭ থেকে ৮৯.৪৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এ জেলার অবস্থান। কুড়িগ্রাম জেলার সর্ব উত্তর-পুর্ব দিকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা, জেলা সদর থেকে ৪০ কি:মি দুরত্ব। এর উত্তর ও পশ্চিম দিকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ,পুর্ব দিকে আসাম, দক্ষিণে নাগেশ্বরী উপজেলা।

জলবায়ু ও ভুমির বৈশিষ্ট্যঃ
উপজেলার জলবায়ু সর্বত্র নাতিশীতোষ্ণ। জানুয়ারির প্রথম দিকে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। সর্বত্রই ভুমি সমতল, নদীর কাছাকাছি বালু প্রাবাল্যতা লক্ষ্য করা যায়।

প্রধান নদ-নদী ও বিলঃ
নদ-নদীময় উপজেলার প্রধান নদী গুলো হল, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ফুল কুমার, বগনী, কালদানী, বারকাটা, দিয়াডাঙ্গা নদী সোনাহাট বিল, সর্বজায়া বিল, দিয়াডাঙ্গা বিল, বাউসমারি বিল, মরা সাঙ্কোশ অন্যতম বিল এই উপজেলার।

উপজেলার ইউনিয়নের নামঃ
উপজেলার মোট ইউনিয়ন ১০টি। এগুলো হল: ভূরুঙ্গামারী সদর, আন্ধারিঝাড়, চর ভূরুঙ্গামারী, জয়মনির হাট, তিলাই, পাইকের ছড়া, পাথর ডুবি, বঙ্গসোনার হাট, বলদিয়া ও শিলখুড়ি।